নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে বন্ধুর অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। আমার আগেই তার আসার কথা থাকলেও অফিসের কাজের জন্য দেরি য়ে গেছে। মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। স্ক্রিণে চোখ রাখি সেটা দেখার জন্য। এক্সকিউজ মি..একজন আমার দৃষ্টি আর্ষণ করায় তার দিতে তাকিয়ে বলি-ইয়েস। আপনি কি কারোর অপক্ষোয়? জ্বী…. কিন্তু (আপনার নয়) পরের শব্দ দুটি অনুচ্চারিত থেকে যায় বা মনে মনে বলি। আমার চাহনি দেখে বুঝতে পারেন যে আমি তাকে চিনতে পারিনি। নিজ থেকেই পরিচয় দেবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করেন- আমাকে চিনতে পারেননি বোধয়; মাস দুই আগে চট্টগ্রাম যাবার পথে ট্রেনে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল.. মানুষের চেহারা মনে রাখতে না পারার অপারগতার কথা জানিয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। এবার তার চেহারাটা মনে পড়ে। জানতে চাই – এখানে কোথা থেকে? স্কুল থেকে ফিরছি। আপনি কার অপেক্ষায়? এক ফ্রেন্ড আসছে। সে আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে। আপনিতো শহরে থাকেননা; অনেক দূরে থাকেন। তাহলে এ শহরে আপনার বন্ধু থাকে কি করে! কথাটা আমাকে খোঁচা দিয়ে বলা বুঝতে পারি। আমি স্বাভাবিক জবাব দিই- শহিদ মিনারের সামনে পহেলা বৈশাখে টিএসতে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের মানব বন্ধন চলছে দেখে আসলাম। সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও আমার বন্ধু তালিকায় আছে। তাই নাকি? আগে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন নাকি? নাহ… তার সাথে ব্লগের মাধ্যমে মাধ্যমে পরিচয়। ও। আপনিতো লেখালেখি করেন। এ শহরে আপনার অনেক বন্ধু। তার কথায় কিঞ্চিত বিস্মিত হই।এ খবর আপনি জানেন কি করে? সে কথা পরে বলছি, আপনি চলুন আার সাথে। কোথায়? আমাদের বাসায়। আমার বন্ধু সম্ভবত আশ পাশেই চলে এসেছে। আপনার সাথে যেতে পারছিনা, সরি। সরি বললে তো হবেনা, মাকে যে কথা দিয়েছি, আপনার সাথে দেখা হলেই আপনাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাব! বলেন কি! হ্যাঁ। সেদিনের পর মা আমাকে এবং আপনাকে ইচ্ছেমত গালাগাল করেছেন! দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা একসাথে পাশাপাশি থাকার পরও কেউ কারোর নাম বা যোগাযোগের ঠিকানাটা নেইনি বলে। আমার বন্ধু উপস্থিত হয় আমাদের কথার ফাঁকে। শিল্পকলা একাডেমিতে একটা অনুষ্ঠানে আমাদের যাবার কথা। আমি কিছু বলার আগেই উনি তার ইচ্ছের কথা বলেন। আমাকে আপাতত উদ্ধার করবে এই ভরসায় প্রস্তুতি নেবার প্রাক্কালে বন্ধু বলে উঠে- এমন সুন্দর একজন মানুষ অনুরোধ করছে সাথে নিয়ে যাবার জন্য, তুই কেমন মানুষরে! আমি হলে এতক্ষণে বাসায় পৌছে যেতাম। আমার অন্য একটা কাজ আছে, আজ আর শিল্পকলায় না যাই বলে বন্ধু যেন আমাকে অথৈ জলে ফেলে ফেলে সটকে চলে যায়। একটু দ্রুত চলুন। বৃষ্টি আসতেছে বলে হাঁটতে শুরু করেন । আমার সাথে রিক্সায় না উঠার কৌশলটা তা বুঝি! আমি লেখালেখি করি আপনি জানেন কিভাবে? আপনার ফেইসবুক থেকে। আপনি বলছেন আমার নাম জানেনা আর আমার ফেইসবুকের একাউন্টতো ভিন্ন মানে আমার নামের সাথে মিল নেই ? আর আপনি আমার বন্ধুর তালিকায় আছে বলে তো মনে পড়ছেনা। কারণ গত কয় মানে হাতেগোনা যে কয়জন বন্ধু হিসেবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তাদের সবাই মোটামুটি চেনা জানা। আপনার মোবাইলের সেটিং সমস্যার কারণে একবার আমাকে আপনার মোবাইল দিয়েছিলেন মনে আছে? তখন আপনি ফেইসবুকে লগইন অবস্থায় ছিলেন। তখন আপনার আইডিটা চোখে পড়েছিল। আমি আপনার এফবিতে বন্ধু তালিকায় নেই কিন্তু আপনার সকল আপডেট আমি জানি। আপনার প্রোফাইল থেকে আপনার সমন্ধে কিছু না জানা গেলেও আপনার সকল লেখা পড়া যায় অনায়াসে। আপনার লেখা আমার ভালো লাগে তাই আপনার সকল লেখা আমার পড়া হয়ে গেছে। আপনার পেজের বাম দিকের নিচের অংশে একশত একুশটা নোট আছে সব গুলো আমার পড়া! একটা ব্লগ কি যেন নাম এই মুহূর্ত ভুলে গেছি সেখানকার লেখা গুলোও আমার পড়া হয়ে গেছে। আচ্ছা এখন ব্লগে লিখেননা কেন? এক সময় ব্যস্ততায় ব্লগে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভাবছি আবার লেখালেখিটা শুরু করব। আচ্ছা আপনার ছবি গল্পের নায়িকার সাথে যোগাযোগ আছে? বিভিন্ন দিবসে মাঝে মাঝে তাকে মেসেজ দেই শুভেচ্ছা পাঠাই। তার সাথে কি আপনার একবারই দেখা হয়েছিল? কয়েকবার দেখা হয়েছে। সত্যি, তার বাসায় গিয়েছেন কখনো? না। কেন তার স্বামী মানে আপনার শিক্ষক কিছু মনে করবেন এই কারণে? তার তো বিয়েই হয়নি! বলেনকি! সত্যি তার বিয়ে হয়নি? তাহলে আপনি গল্পে এমনটি করলেন কেন? সে অনেক কথা। একজনার কথার প্রেক্ষিতে এমনটি করেছিলাম। তবে গল্পটা লেখার পর তাকে দিয়েছিলাম। তাকে এও বলেছিলাম- আমি গল্পের একটা সমাপ্তি টেনেছি তিনি যেভাবে চান সেভাবেই আমি শেষ করব। তাই নাকি? তা উনি কি বলেছিলেন? গল্পকার যেভাবে লিখেছেন সেভাবেই থাক। তবে আমার ধারণা। গল্পের সমাপ্তি তার পছন্দ হয়নি। আপনার চিঠিগুলো অসাধারণ। আমি বারবার পড়ি। আমার অনুমান দুইটি চিঠি একজনকে নিয়ে লিখা। হতে পারে। ঠিক মনে পড়ছেনা। বুঝতে পারি আমার লেখার মান যাই হোত একজন সমঝদার পাঠক পেয়েছি। আরো কিছু প্রশ্ন করি। আপনি মনে কিছু নেবননাতো? আমি আপনাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছিনা আপনার লেখার প্রেক্ষিতে লেখককে প্রশ্ন করছি। কোনো একজনকে লেখক (আপনি) ভালোবাসতেন। উনি নিজ থেকে দূরে চলে গেছেন। তাপরও লেখক তাকে কেন ভালোবাসেন এখনো? আমরা বাসায় চলে আসি। আমাকে ড্রয়িংরোমে রেখে ছুটে গিয়ে তার মাকে নিয়ে আসেন। দেখ মা কাকে নিয়ে এসেছি। আমাকে দেখেই তিনি চিনে ফেলেন। একসাথে চিটাগাং গিয়েছিলামনা আমরা? কেমন আছ তুমি? জ্বী ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? আমরাও ভালো আছি। মা তোমরা কথা বল। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি বলে পাশের রোমে যাবার পথে তাকে ডাক দিয়ে দাড় করান । মিতা শোন, একটু চায়ের পানি চুলোয় বসিয়ে দিসতো। তুমিতো কিছুটা শুকিয়ে গেছ। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করোনা নাকি? চট্টগ্রাম থেকে ফেরার পর পরিচিত সবাই বলাবলি করছিল আমি নাকি খানিকটা মোটা হয়ে গেছি। সেটা কন্ট্রোল করার জন্য খাদ্য তালিকা সামান্য পরিবর্ণ করেছি।। কি বলছ এসব! এ বয়সে এত কিছু হিসেব করে চললে হবে এ বয়সে সারাদিন বেশি বেশি করে খাবে কেমন? ও হ্যা তোমার পরিবারের লোকজন কেমন আছে? বাড়িতে গিয়েছিলে কি এর মাঝে? জ্বী বাড়ির সবাই ভালো আছে। অফিসের ব্যস্ততা এবং অন্যান্য কাজে বাড়ি যেতে পারছিনা । তবে যোগাযোগ আছে। আচ্ছা এখান থেকে গিয়ে কি তুমি অফিস করতে পারবে? মানে তোমার অফিস কি অনেক দূর? খানিক দূর বটে। তবে অনেকে এ শহর থেকে গিয়ে প্রতিদিন অফিস করে। তাহলে … এরি মাঝে মিতা রোমে প্রবেশ করে। সে মায়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জানতে চায় তাহলে কি মা? বলছিলাম আমাদের নিচ তলার এক পাশ তো খালি পড়ে আছে। ওর যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমাদের বাসা থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করতে পারে। আর খাওয়া দাওয়াটা ও আমাদের সাথে করতে পারে। দেখনা কেমন শুকিয়ে গেছে। কি সব যে রান্না করে বুয়ারা। খানিকটা রকিতার ছলে মিতা বলে তাহলেতো ভালই হয়, তাকে আর খুঁজে খুঁজে বের করে আনতে হবেনা। মিতা আমাদের পাশে এসে বসে। তার মা চা আনতে অন্য রোমে চলে যান। মা তো আপনাকে আমাদের বাসায় থাকতে বলছেন ,আপনার আগ্রহ আছে নাকি? না। দূর হয়ে যায়। আর মাঝে মাঝে তখন তখন অফিসে যাওয়া লাগে। আসতে চাননি এবার দেখলেন তো আপনাকে মা কতটা ভালোবাসেন। দিন শেষে বাসায় ফিরলে প্রায়ই জানতে চান আপনার সাথে দেখা হয়েছে কিনা। দেখলেননা আপনি শুকিযে গেছেন সেটাও উনার নজর এড়ায়নি। আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দেননি? কোনটির? লেখক কেন এখনো তার প্রিয় মানুষকে ভালোবাসে? ওই লেখাগুলো অনেক আগের। এখন আর তাকে ভালোবাসে বলে আমার মনে হয়না। তাই নাকি? ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যাওয়া যায়া যায়? আপনার জীবন থেকে এর উত্তর দেন আগে আমি পরে আমারটা বলছি। তার মা চা, বিস্কিট, সহ নানা ধরণের ফল ট্রেতে করে নিয়ে আসেন। চা পান করতে করতে বলেন-আমি ভেবে দেখলাম তোমাদের দুজনের মাঝে বেশ মিল আছে।তোমরা দুজনেই বয়সে বেশ পরপক্ক। তাই সরাসরিই বলি।তোমরা যদি মতামত দাও আমি তোমাদেরকে একত্রে করে দিতে চাই। এমন কথা শোনার জন্য আমার কেউই প্রস্তুত ছিলামনা। একে অপরের মুখের দিকে একবার তাকাই আবার তার মায়ের মুখের দিকে। আমাকে বাসায় ধরে এনে এমন কান্ড ঘটাবে মিতা ভাবেনি। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। আমার দিকে আর তাকাতে পারেনা। চোখ নামিয়ে নেয়। আমি বিষয়টিকে সহজ করার জন্য বলি বলছিলাম কি আমার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে নিন আপনি। তারা যদি মতামত দেন… আমিতো এক পক্ষের অভিভাবক, অন্য পক্ষকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। তোমার মতামত বল খানিব সময় নিয়ে বলি- একটু ভেবে বলি। আমার কখা শেষ না হতেই মিতাও বলে উঠে- আমি ভেবে বলি!
ট্রেন ছাড়ার সময়ের আধঘন্টা পূর্বে স্টেশনে হাজির হই। প্লাটফরমে যাত্রী বলতে গেল নেই ই। মনে ভয় জাগে ট্রেন কি তবে চলে গেছে! মাঝে মাঝে মোবাইলে সময় উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। আজ কি তবে….। একজনার কাছে জানতে চাই সময় কত হলো। তার কথায় নিশ্চিত হলাম আমি আধঘন্টা আগেই এসেছি। কিন্তু স্টেশনে যাত্রী নেই কেন? ট্রেনও তো প্লাটফরমে দাড়িয়ে থাকার কথা। স্টেশনের অনুসন্ধান রোমের দরজা বন্ধ। সহকারী স্টেশন মাস্টার তার রোমে নেই। কিছু লোক সেখানে দাড়িয়ে জটলা পাকাচ্ছেন। একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করেই চলছেন; কোনে উত্তর মেলেনা। সবাই বলাবলি করছে ট্রেন লেট, তবে কত সময় লেট কেউ জানেনা। রোমের দরজার পাশে দেয়ালে একটি কাগজ সাটানো আছে । সেখানে কয়েকটি ট্রেনের নম্বর ও একটি এসএমএস করার নম্বর দেয়া আছে ; ট্রেনের নাম লিখে মেসেজ পাঠালে ট্রেনের অবস্থান জানা যাবে। কয়েকজন চেষ্টা করে দেখছেন ট্রেনের অবস্থান জানার জন্য। আমিও কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অবস্থান জানার জন্য একটা মেসেজ পাঠাই। ফেরত মেসেজে জানানো হয় বিকেল ৩.১৫ সময় ট্রেন ছাড়তে পারে! মাত্র দশটা বাজে। বাসায় যেতে ১ ঘন্টা লাগবে। আবার ফিরতে একঘন্টা। মাঝে ৩ ঘন্টা সময় বিশ্রাম করে আসা যাবে। কিন্তু যেতে মন চাইছেনা। প্লাটফরমে এত সময় বসে থাকাও সম্ভব নয়। কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারলে ভালো হতো। হাতে বেশ নাদুশ নুদুশ একটা ব্যাগ। এটা নিয়ে হাঁটাও যাবেনা। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে পরিচিত একজনার বাসার দিকে রওয়ানা দিই। তার বাসায় যাবার পথে অন্য একজনার সাথে দেখা হয়। তাকে ব্যাগটা গছিয়ে অনির্ধারিত গন্তব্যে রওয়ানা দিই। যদি ট্রেন চলে যায় এই শংকায় তিনটার আগেই স্টেশনে পৌছে খবর নিয়ে জানতে পারি ট্রেন ডকে আছে। ফ্লাটফরমে বসে ট্রেনের অপেক্ষা করি। আমার বসার স্থানের পাশেই পুলিশ ফাড়ি। দশ বারো বছরের একটি ছেলে সহ এক মহিলা এসে চারদিক সরগরম করে তুলেন। তিনি পাশের এক চায়ে দোকানে ব্যাগ ভুলে ফেলে এসেছিলেন। এখন দোকানদার ফেরত দিচ্ছে না। তার কথায় কয়েকজর পুলিশ সেই দোকোনের দিকে রওয়ানা হয়। একটু পরে পুলিশের লোকজন ফিরে আসে। খানিক বাদে মহিলাও আসেন। আবার শুরু করেন চেচামেচি! তার মতে দোকানদারের সাথে পুলিশ আতাত করে ব্যাগ মেরে দিয়েছেন! আর দোকানদারে ভাষ্য ব্যাগ দোকানে রাখেনননি, অন্য কোথাও….। তাই পুলিশের কিছু করার নেই। একজন পুলিশের সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমার এলাকার লোক। তার সাথে কথা বলতে বলতে ট্রেন এসে দাড়ায় সামনে। আমাকে সাথে করে নিয়ে চলেন সিট দেখিয়ে দেবার জন্য। ট্রেনের একেবারে সামনের বগিতে সিট। সিটের পাশে দাড়িয়ে নানা উপদেশ ও পরামর্শ্ দিতে থাকেন। আমি সুবোধ ছেলের মত গোগ্রাসে গিলতে থাকি সেসব। যাত্রীরা উঠতে শুরু করেছে ততক্ষণে। তিনজন যাত্রী সিট খুঁজতে খুঁজতে আমাদের সামনে এসে দাড়ায়। একজন বয়স্ক পুরুষের সাথে মহিলা এবং একটি মেয়ে। সাথে থাকা দুইটি বড় ব্যাগ উপরে রাখতে গেলে আমি এবং আমার সঙ্গী মিলে হেল্প করি। তাদের তিন সিটের ২ টি আমার বাম পাশে; অন্যটি আমার সাথে। বামপাশের জানালার পাশে বয়স্ক মহিলা বসেন। তার পাশে বসার জন্য বৃদ্ধ লোকটি মেয়েটিকে আদেশ করেন। সে জানায় জানালার পাশে বসবে এবং আমার সিটের পাশের সিটে গিয়ে বসে। বৃদ্ধ বাধা দিয়ে বলেন- কে…না… কে এখানে বসে…..। আমি জানাই ‘ বসুক কোন সমস্যা নেই, পাশের সিট আমার’। আমি পুলিশের সাথে নিচে নেমে যাই। ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় পেয়ে যায় । ট্রেন ছাড়েনা। প্লাটফরমে অপেক্ষা করতে থাকি। একটা পত্রিকা কিনে ট্রেনে ফিরে আসি। দেখি মেয়েটি বাইরে জানালার পাশে দাড়ানো একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। কারো দিকেই আমি তাকাইনা। ট্রেন কেন ছাড়ছেনা এই ভেবে বিরক্ত লাগে। আমার বিরক্তি বেড়েই চলে। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে চারটায় ট্রেন ছাড়ে। আমি আমার সিটে এসে বসি। কিছুটা অস্বস্থিঃ অনুভব করি। আমার সিটের বাম পাশের হাতল নেই। ডান দিকে হেলান দিতে গেলে পাশের যাত্রীর গায়ে শরীর লেগে যায় ভয়ে পারিনা। স্বাভাবিক হতে পত্রিকায় চোখ বুলাই। পাতা মেলতে গিয়ে একবার দুই সিটের হাতলের উপরে রাখা পাশের যাত্রীর হাতের সাথে হাত লেগে যায়। উনি হাত নামিয়ে নেন। আমি পত্রিকার পাতায় মনোনিবেশ করি। (২) পত্রিকা পড়ায় সামান্য বিরতি দিই। পাশের যাত্রী মোবাইলে ব্যস্ত। হয়তো ফেসবুকে মশগুল। দুই হাত সমানে চলছে মোবাইলের স্ক্রীণে। এক হাতের কনুই ডান পাশের হাতলের উপর। আরেকটা হাত বামপাশের হাতলে রাখলে তার সুবিধে হয় কিন্তু হাতলটা দু‘জনের সিটের মাঝে হওয়ায় তার অর্ধেকটার (জার্নি শেষ না হওয়া পরযন্ত) মালিকানা দুইজনের এই ভেবে কদাচিত হাতলের উপর হাত বেখেয়ালে চলে এলেও সেটা আবার নামিয়ে নেন। কয়েকবার বিষয়টি আচঁ করতে পেরে আমি বলি- আপনি হাতলে হাত রাখুন, কোনো সমস্যা নেই। স্বতর্স্ফুর্ত ভাবে বা সৌজন্যাবোধ থেকে তাৎক্ষণিক জানতে চান- আপনার ওই পাশে হাতলটা নেই না? জ্বী, ভাঙ্গা। তাহলে আপনি এই হাতলে হাত রাখুন। আমার এপাশে একটা আছে। না আপনিই হাত রাখুন। আমার পাশে যেহেতু হাতল নেই মাঝেরটাও না ব্যববহার করি! গাড়ির গতি বেশ মন্তর। কত সময় পর পর ইচ্ছেমত যাত্রাবিরতি দিচ্ছে। দরজা জানালা সব বন্ধ থাকায় দিনের আলো শেষ হবার পূর্বেই আন্ধকার ঘনীভূত হয়। পত্রিকা পড়তে বেশ সমস্যা হয়। পাতা গুটিয়ে সামনের সিটের পেছনের খোঁপে গুঁজে রাখি। ট্রেনের লাইটগুলো জ্বলে উঠে। যাত্রীদের মুখগুলোও যেন উজ্জ্বল আভায় রাঙিন উঠে। আমি আবার পত্রিকা খুলে একটা কলাম পড়ায় মনযোগ দিই। আমার পাশের যাত্রী তার ব্যাগ থেকে একটা চিপসের প্যাকেট বের করে সেটার মুখ খুলে নিজে কয়েকটা নিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে বলেন- নেন… ধন্যবাদ। আপনি খান ,আমি চিপস খাইনা। ও… ওজন বেড়ে যাবে এই ভয়ে চিপস খাবেবনা! (চিপস খেলে ওজন বাড়ে আপনার চেহারা দেখে সে কথার সপক্ষে প্রমাণ মেলেনা! মনে মনে বলি) না তা হবে কেন? আমি এমনিই খাইনা। আমার কাছে মনে হয় এটা ছোটদের খাবার। আচ্ছা নিচ্ছি বলে কয়েকটা চিপস হাতে নিই। পত্রিকাটা বন্ধ করে তার দিকে মনযোগী হই। ওহ.. আপনিতো বড় হয়ে গেছেন, আমি এখনো ছোট কিনা। আমি এবার তার মুখের দিকে তাকাই। মনে হলো স্রষ্টা দুনিয়ার তাবৎ সৌন্দর্য এক করে তার মাঝে দিয়ে দিয়েছেন! বয়স আন্দাজ করতে পারিনা। বলে নেয়া ভালো যখন বাইরে দাড়ানো ছেলেটির সাথে কথা বলছিল তখন মনে হচ্ছিল ভার্সিটি পড়ুয়া হবেন। এখন কিছুই অনুমান করতে পারছিনা। আপনার বাড়ি কি চিটাগাং? আবার চিপসের পেকেটটা বাড়িয়ে দিতে দিতে জানতে চান না। আমি একটা কাজে যাচ্ছি। সিলেটেই থাকেন বুঝি? জ্বী। তবে ঠিক শহরে না। একটু দূরে গোলাপগঞ্জ। আপনার বাড়ি কোথায়? অবশ্য বলতে চাইলে প্রয়োজন নেই। আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কাজের সূত্রে সিলেটে থাকি। আমার বাড়ি সিলেটেই। আমরা বেড়াতে যাচ্ছি চিটাগাং চিপস খেতে খেতে জেনে নেন আমি কি করি, কেন চট্টগ্রাম যাচ্ছি , কতদিনবা থাকব ইত্যাদি ইত্যাদি। কুলাউড়া স্টেশনে গাড়ি থামার পরে আর ছাড়ার নাম নেই! বাস হলে এত সময়ে যাত্রীগন ড্রাইভারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে নিতেন। কেউ কেউ রেলওয়েল কর্তাগণের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। কেউ কেউ জানালা খুলে বাইরের দিকে দেখছেন। সন্ধের আবছা আধার নিকষ অন্ধারে বিলীন হবার পথে। (অসমাপ্ত)
এক্সিবিশন শুরু হয়েছে সকাল নয়টায়। সন্মেলন কেন্দ্রে পাশ দিয়ে যাবার সময় ভাবনায় আসে একবার ঢু মেরে যাবার। তাই অরণ্যর আসা। প্রদর্শনী দেখে রীতিমত মুগ্ধ হয় । এত সুন্দর একটা প্রদর্শনী মিস হয়ে যেত ভেবে বেশ আফসোসই হচ্ছিল। তুঁলিঁর আচড়ে ফুটিয়ে তোলা থেকে শুরু করে পুরোনো সাদা কালো এমনকি হালের আধুনিক ক্যামেরার সাটার চেপে উঠানো আলোকচিত্র দিয়ে পুরু মিলনায়তন সাজানো হয়েছে। দর্শনাথীদের আনাগোনাও প্রচুর। কেউ কেউ কাছে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে ছবি। ছবি তোলা অরন্যর অন্যতম শখ। প্রদর্শনী কেন্দ্রে প্রবেশ করেই তার ক্যামেরা অন করে সাটার টিপতে শুরু করে। ছবি গুলো লেন্সের পর্দায় দেখে আর পছন্দ মত ক্যামেরায় তুলে নিতে থাকে। অরণ্যর ক্যামেরার সাটার কতক্ষণ পর পর এক একটা দৃশ্যকে ফ্রেম বানিয়ে তা বন্দী করতেই থাকে। এক সময় একটা দৃশ্যে চোখ আটকে যায়। সারি সারি গাছের পাতা ভেদ করে সকালের প্রথম সূর্যরশ্মি শিশির কণার উপর পতিত হচ্ছে আর সেদিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে আছে এক কিশোর। দৃশ্যটা তার কাছে জীবন্ত মনে হয় যেন ইচ্ছে করলেই তাকে ছোঁয়া যাবে। সেই জীবন্ত দৃশ্যটাকে ফ্রেমবন্দী করার জন্য ক্যামেরার সাটার টিপে। ছবিটা উঠে তবে আরেক জনের মুখাবয়ব সহ। সেই মুখ দেখে আরো বেশি চমকিত হয় অরণ্য। এবার ক্যামেরার আলোকবিন্দু সেই মুখের পানে নিবিষ্ট হয়। দর্শনার্থীর চোখ ছবিতে বিমুগ্ধ থাকায় পর পর কয়েকবার ক্যামেরা ক্লিক করলেও ঠিকমত ছবি তুলতে পারেনা। দুজন মুখোমুখি হয়। প্লিজ আপনার একটা ছবি তুলতে পারি? অরন্যর বিনয়ী কথায় আর না করতে পারেননি । সাবলীল ভঙ্গিতে ছবি তোলায় সহায়তা করেন। বিভিন্ন এংগেল থেকে বেশ কয়টি ছবি তুলে নেয়। ছবি তোলার ফাকেঁ তিনি জানতে চান। আমাকে কি ছবি গুলো দেয়া যাবে? কেন নয়? আপনার ইমেল এড্রেস দিলে আমি পাঠিয়ে দিব। আমার কোন ইমেইল এড্রেস নেই। তাহলে আপনার ঠিকানা দিলে আমি নিজেই পৌছে দিয়ে আসব। আমার মোবাইল নম্বরটা রাখুন,পরে আপনার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে নিব না হয়। ঠিক আছে দেন। আচ্ছা ওই দিকটায় আর কয়েকটা ছবি তুলে দিবেন? তিনি মঞ্চের দিকে ইংগিত করেন। নম্বর দিতে দিতে অরণ্য আহ্বান করে চলুন….. ঠিক সেই মুহূর্তে অরণ্যর ফোনটা বেজে উঠে। রিসিভ করে কিছুই শুনতে পায়না। কথা শুনার সুবিধার্থে কোলাহল ছেড়ে একটু আড়ালে চলে আসে।বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজে তখনই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্য এক বন্ধু অনুরোধ করে। কলটা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে চট জলদি আরো কয়টা ছবি তুলে বিদায় নেবার জন্য। সেখানে গিয়ে দর্শনাথীকে আর খুঁজে পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে অরণ্য ছবি গুলো এডিট করতে বসে।বেশ ভাল ছবি উঠেছে। বিশেষ করে একটি ছবি এতই সুন্দর উঠেছে যে সে চোখ ফেরাতে পারেনা। এমন মায়াবী টানা টানা চোখে তাকিয়ে থাকলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে সাধ্য কার! বেশ সময় নিয়ে নিখুঁত ভাবে ছবিটা এডিট করতে থাকে।যেভাবেই দেখে যে রঙে রাঙাতে চায় সে রঙেই অনবদ্য আকার ধারণ করে । ভাবনায় ও পড়ে। এত সুন্দর মানুষ হয় কি করে? সৃষ্টিকর্তা কি দুনিয়ার তাবৎ সৌন্দর্য তার মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন? হয়তোবা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে ছবির পানে। ছোট বোন চৈতির ডাকে তার সম্বিৎ ফিরে। কিরে এমন ধ্যানমগ্ন হয়ে কি দেখছিস? দেখি দেখি ছবিটা কাররে ভাইয়া? দেখতে তো বেশ। না কিছুনা। কিছুনা মানে আমিতো দেখছি তুই ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছিস? কে মেয়েটি? চিনিনা। আজ এক্সিবিশন থেকে তুলেছি। চিনিসনা তাহলে ছবি তুললি যে? ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ সামনে পড়ে গেল। তা পরিচয় জানবিনা? সময় ছিলনা। তোর আর এ জীবনে সময় হবেনা। অরণ্য কিছুটা ক্ষেপে যায়। পাকামি বাদ দিয়ে বল কি জন্য এসেছিস? একটা মেইল করতে হবে। চৈতিকে পিসি দিয়ে অরণ্য উঠে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে অরণ্য ইমেইল চেক করার জন্য পিসি অন করতে গিয়েই চোখের পর্দায় বড় একটা ধাক্কা খায়। চৈতি ডেক্সটপের স্ক্রীনে সে ছবিটা সেট করে রেখেছে। এত সুন্দরভাবে ছবিটি ফুটে উঠেছে মনে হয় যেন কোন চিত্র শিল্পী বেশ যতন করে সৃষ্টি করেছে । চমৎকার স্লিম গড়ন,কাজল টানা দুটি চোখ,ডান পাশের ঠোটেঁর কোনে একটা তিলক চিহ্ন। ছবিট যেন অপূর্ব সৌন্দর্যের এক আধাঁর। এমনভাবে ছবিটি তোলা হয়েছে দেখলে মনে হয় পলকহীন তাকিয়ে আছে। প্রথমবার ছবি দর্শনের সাথে সাথে অরণ্য চোখাচোখির লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। দ্বিতীয়বার চোখ মেলার পর আর পলকই ফেলতে পারেনা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ নয়নে। চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা। ভার্সিটিতে যাবার সময় হয়ে যায় অরণ্যর খেয়ার থাকেনা। মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে। দ্রুত পিসি বন্ধ করে বাসা থেকে দৌড়ে বের হয়।ক্লাশে যেতে দশ মিনিট পেরিয়ে যায়।ক্লাশে বসে পাঠে মনযোগে ভাটা পড়ে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে সেই ছবিটা। ইচ্ছে করলেও সেটা সরাতে পারেনা। ক্লাশ শেষে ল্যাবে যায় ছবি প্রিন্ট করার জন্য।সেখানে গিয়ে মনে পড়ে ছবিই নেয়া হয়নি। বিকেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরোলেও আড্ডায় মন বসেনা। অস্থিরতা কাজ করে মনে।কী যেন খুজেঁ বেড়ায়। আনমনা হয়ে যায় বারবার। বন্ধুরা প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যায়। কিছু সময় পর পর ছবির ভাবনা মনের কোনে ভিড় জমায়। আড্ডা শেষ হবার অনেক পূর্বেই অন্যদের ছেড়ে চলে আসে বাসায়। তখন ছবি আরো বেশি চুম্বকের মত টানে তাকে।পিসি খুলে এডিট করা ছবি গুলো ফের বিভিন্নভাবে নানা আকারে সাজায়। কত সময় ধরে এক একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছুটির দিনে অরণ্য অনেকটা সময় বাইরে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আজ আর ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করছেনা।এ রোম থেকে ওই রোম;কখনো বিছনায় শুয়ে এবং এলোপাথাড়ি ভাবনার ঘোরেই দিনটা কাটিয়ে দেয়। শেষ বিকেল একবার ইচ্ছে জাগে ল্যাবে গিয়ে ছবি গুলো প্রিন্ট করিয়ে আনার কিন্তু কোন কিছুই হয়ে উঠেনা। ভার্সিটিতে যাবার সময় মনে করে পেনড্রাইভটা সঙ্গে করে নিয়ে নেয়। ছবি গুলো কেমন হল এক নজর দেখার জন্য মন আর সয়ছেনা যেন। এক ক্লাশ বাদ থাকতেই ল্যাবে গিয়ে উপস্থিত হয়। দেখে বিদ্যুৎ না থাকা ল্যাবের লোকজন খোশ গল্পে মত্ত। তিনদিন পর ছবি হাতে পায় অরণ্য। এবার অস্থিরতা আরো বাড়ে। একটা ফোনের অপেক্ষায় এ অস্থিরতা। কবে সে কাঙ্খিত মানুষটি ফোন দিবে। প্রতিটি মুহূর্তে প্রতাশা করে সে ফোনের। কত সময় পর পর মোবাইলের দিকে তাকায়,কোন অপরিচিত নম্বর থেকে কল এল কিনা। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে অন্ধকার হাতড়ে মোবাইলটা খুজেঁ দেখে ফোন এল কিনা। রাত বিরাতে সময়ে অসময়ে ফোনটা বেজে উঠে। রিং শুরু হলেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে। ছবির মানুষটি বুঝি ফোন দিল! প্রতিদিন অপ্রত্যাশিত অনেক ফোন এলেও অরণ্যর প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটেনা। চাতক পাখির ন্যায় সে একটা ফোনের অপক্ষোয় থাকে। নিজ থেকে ছবি চেয়ে ফোন নম্বর নেবার পরও কেন একবারও যোগাযোগ করেনি বিষয়টি বুঝে উঠেনা অরণ্য। তখন কেন তার নম্বরটা নেয়নি ভেবে প্রচন্ড রাগ হয়। এত অবশ্য তাকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। এটাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট। হুট করে কারোর সাথে মিশতে পারেনা। না হয় নিজের নম্বর দেয়ার পরিবর্তে তার নম্বরটা চেয়ে নিতে পারত। সময় যায় ;ফোন অসেনা। অরণ্য আশা ছাড়েনা।নিশ্চয় একদিন ঠিকানা পাবে ছবি গুলো পৌছে দেয়ার জন্য। শুধু ফোনের প্রত্যাশায় না থেকে চলতি পথে যদি কোথাও দেথা হয়ে যায় ভেবে ছবি গুলো নিজের সঙ্গেই রাখে। যখনই পিসি অন করে ডেক্সটপের ছবিটাসহ প্রতিটি ছবি বেশ সময় ধরে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখে। যতবার দেখে প্রতিবারই নতুনত্ব নিয়ে ফুটে উঠে ছবি গুলো। দেখে যেন তৃষ্ণা মেটেনা। কখনো কখনো প্রিন্ট করা ছবি গুলোও নাড়া চাড়া করে দেখে। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে একটা চাকুরী ও পেয়ে যায়।অফিস মতিঝিলে। মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে এবং আসতে প্রতিদিন অনেক নতুন মুখের দেখা মেলে। ভরসা পায় কোন একদিন সে মানুষটিরও দেখা পেয়ে যাবে। যে খানেই কোন প্রদর্শনীর খবর পায় ছুটে যায় অরণ্য। প্রদর্শনীর চেয়ে আগত দর্শনার্থীদের প্রতি নজর থাকে বেশি। অগনিত মানুষের ভীড়ে খুজেঁ ফিরে যাকে একদিন ক্যামেরাবন্দী করেছিল। বারবার হাতের স্পর্শে ছবি গুলো মলিন হয়ে যায়। নতুন করে প্রিন্ট করিয়ে নোর জন্য। সেখানে দেখা হয় এক বন্ধুর সাথে। জানতে চায় মেয়েটি কে? কয়দিন পূর্বে এক বন্ধু এক মেয়ের ঠিকানা দিয়েছিল একটা লিটলম্যাগ পাঠানোর জন্য। সে মেয়েটি কিনা জানতে চায়। অরণ্য জানায় যে ছবির মানুষটির সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। সপ্তাহে ছয় দিন সকাল নয়টা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত অফিস। যাওয়া আসার আরো ঘন্টা তিনেক।চক্রাকার বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায় অরণ্যর জীবন।শুধু ছুটির দিন গুলোতে খানিক বেড়ানোর সুযোগ মেলে। অন্যদিন গুলো কোন দিক দিয়ে চলে যায় খেয়ালই থাকেনা। এত ব্যস্ততার মধ্যে একজনার কথা মনে থাকে। কখনো কাজের ফাকেঁ, কখনো অবসর মুহূর্তে কিংবা প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও যে ছবিটি তার মনের কোনে ভেসে উঠে;যার কথা নিজের অজান্তেই মনে পড়ে সে..। প্রতিনিয়ত তাকে খুজেঁ ফেরে অরণ্য। ইউনিভার্সিটি থেকে বের হবার ঠিক এক বছরের মাথায় সমাবর্তনের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। পড়ালেখা শেষ করে তার ক্লাশমেটদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে। ঢাকা শহরে যারা থাকে ব্যস্ততায় তাদের সাথেও দেখা হয়ে উঠেনা। চলতি পথে রাস্তায় বা বাসের ভেতরে কোথাও দেখা হলে কৌশল বিনিময় করতে করতেই যে যার কাজে ছুটে চলে। সময় করে কয়েকজনে মিলে একত্রে বসা হয়ে উঠেনা। সবার অবসর সময় গুলো একত্রে ধরা দেয়না। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অনেক পরিচিত মুখ চোখে পড়ে অরণ্যর। দীর্ঘ দিন পরে একত্রে জড়ো হওয়ার আনন্দে অনেকেই বিভোর হয়ে পড়ে তুমুল আড্ডায়। কেউবা শেয়ার করে নিজ কর্মক্ষেত্রের কথা।কত হাসি-আনন্দ;দু:খ-বেদনার কথা মালা সেসব।মনযোগ সহকারে শুনে সবাই। প্রিয় শিক্ষকদের সাথেও দেখা হয়। তারা আগ্রহ ভরে জানতে চান কে কোথায় কি করছে। যখন শুনে চাকুরী করছে, ভাল অবস্থায় আছে তাদের মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠে। নানা উপদেশ দেন তাঁরা। কয় বন্ধুতে মিলে ক্যাম্পাসের এক পাশে গল্প করছিল অরণ্য। তার প্রিয় এক শিক্ষক পাশ দিয়ে চলার সময়ে ছুটে যায় তাঁর কাছে। অরণ্যকে দেখে তিনি খুব খুশি হন।কৌশল জানতে চান । কি করছে;কোথায় আছে সব জানতে চান।এক সময় তিনি তারঁ স্ত্রীর সাথে অরণ্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। তোমাকে বলতামনা আমার একজন প্রিয় ছাত্র আছে যে খুব ভাল ছবি তুলে? এ হল সেই অরণ্য। আজ কয়েকটা ছবি তুলে নিও তাকে দিয়ে। আর অরণ্য এ হল আমার মানে তোমার ভাবী। মানুষটিকে দেখে অরণ্য বাকহীন মানুষের মত তাকিয় থাকে। এ যে সেই মানুষ যাকে সে খুজেঁ ফেরে।