একদিনের ট্রেন ভ্রমণ (পরের পর্ব)

Posted by zhsoykot On মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫ 0 মন্তব্য(গুলি)

নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে বন্ধুর অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। আমার আগেই তার আসার কথা থাকলেও অফিসের কাজের জন্য দেরি য়ে গেছে। মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। স্ক্রিণে চোখ রাখি সেটা দেখার জন্য। এক্সকিউজ মি..একজন আমার দৃষ্টি আর্ষণ করায় তার দিতে তাকিয়ে বলি-ইয়েস। আপনি কি কারোর অপক্ষোয়? জ্বী…. কিন্তু (আপনার নয়) পরের শব্দ দুটি অনুচ্চারিত থেকে যায় বা মনে মনে বলি। আমার চাহনি দেখে বুঝতে পারেন যে আমি তাকে চিনতে পারিনি। নিজ থেকেই পরিচয় দেবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করেন- আমাকে চিনতে পারেননি বোধয়; মাস দুই আগে চট্টগ্রাম যাবার পথে ট্রেনে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল.. মানুষের চেহারা মনে রাখতে না পারার অপারগতার কথা জানিয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। এবার তার চেহারাটা মনে পড়ে। জানতে চাই – এখানে কোথা থেকে? স্কুল থেকে ফিরছি। আপনি কার অপেক্ষায়? এক ফ্রেন্ড আসছে। সে আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে। আপনিতো শহরে থাকেননা; অনেক দূরে থাকেন। তাহলে এ শহরে আপনার বন্ধু থাকে কি করে! কথাটা আমাকে খোঁচা দিয়ে বলা বুঝতে পারি। আমি স্বাভাবিক জবাব দিই- শহিদ মিনারের সামনে পহেলা বৈশাখে টিএসতে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের মানব বন্ধন চলছে দেখে আসলাম। সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও আমার বন্ধু তালিকায় আছে। তাই নাকি? আগে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন নাকি? নাহ… তার সাথে ব্লগের মাধ্যমে মাধ্যমে পরিচয়। ও। আপনিতো লেখালেখি করেন। এ শহরে আপনার অনেক বন্ধু। তার কথায় কিঞ্চিত বিস্মিত হই।এ খবর আপনি জানেন কি করে? সে কথা পরে বলছি, আপনি চলুন আার সাথে। কোথায়? আমাদের বাসায়। আমার বন্ধু সম্ভবত আশ পাশেই চলে এসেছে। আপনার সাথে যেতে পারছিনা, সরি। সরি বললে তো হবেনা, মাকে যে কথা দিয়েছি, আপনার সাথে দেখা হলেই আপনাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাব! বলেন কি! হ্যাঁ। সেদিনের পর মা আমাকে এবং আপনাকে ইচ্ছেমত গালাগাল করেছেন! দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা একসাথে পাশাপাশি থাকার পরও কেউ কারোর নাম বা যোগাযোগের ঠিকানাটা নেইনি বলে। আমার বন্ধু উপস্থিত হয় আমাদের কথার ফাঁকে। শিল্পকলা একাডেমিতে একটা অনুষ্ঠানে আমাদের যাবার কথা। আমি কিছু বলার আগেই উনি তার ইচ্ছের কথা বলেন। আমাকে আপাতত উদ্ধার করবে এই ভরসায় প্রস্তুতি নেবার প্রাক্কালে বন্ধু বলে উঠে- এমন সুন্দর একজন মানুষ অনুরোধ করছে সাথে নিয়ে যাবার জন্য, তুই কেমন মানুষরে! আমি হলে এতক্ষণে বাসায় পৌছে যেতাম। আমার অন্য একটা কাজ আছে, আজ আর শিল্পকলায় না যাই বলে বন্ধু যেন আমাকে অথৈ জলে ফেলে ফেলে সটকে চলে যায়। একটু দ্রুত চলুন। বৃষ্টি আসতেছে বলে হাঁটতে শুরু করেন । আমার সাথে রিক্সায় না উঠার কৌশলটা তা বুঝি! আমি লেখালেখি করি আপনি জানেন কিভাবে? আপনার ফেইসবুক থেকে। আপনি বলছেন আমার নাম জানেনা আর আমার ফেইসবুকের একাউন্টতো ভিন্ন মানে আমার নামের সাথে মিল নেই ? আর আপনি আমার বন্ধুর তালিকায় আছে বলে তো মনে পড়ছেনা। কারণ গত কয় মানে হাতেগোনা যে কয়জন বন্ধু হিসেবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তাদের সবাই মোটামুটি চেনা জানা। আপনার মোবাইলের সেটিং সমস্যার কারণে একবার আমাকে আপনার মোবাইল দিয়েছিলেন মনে আছে? তখন আপনি ফেইসবুকে লগইন অবস্থায় ছিলেন। তখন আপনার আইডিটা চোখে পড়েছিল। আমি আপনার এফবিতে বন্ধু তালিকায় নেই কিন্তু আপনার সকল আপডেট আমি জানি। আপনার প্রোফাইল থেকে আপনার সমন্ধে কিছু না জানা গেলেও আপনার সকল লেখা পড়া যায় অনায়াসে। আপনার লেখা আমার ভালো লাগে তাই আপনার সকল লেখা আমার পড়া হয়ে গেছে। আপনার পেজের বাম দিকের নিচের অংশে একশত একুশটা নোট আছে সব গুলো আমার পড়া! একটা ব্লগ কি যেন নাম এই মুহূর্ত ভুলে গেছি সেখানকার লেখা গুলোও আমার পড়া হয়ে গেছে। আচ্ছা এখন ব্লগে লিখেননা কেন? এক সময় ব্যস্ততায় ব্লগে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভাবছি আবার লেখালেখিটা শুরু করব। আচ্ছা আপনার ছবি গল্পের নায়িকার সাথে যোগাযোগ আছে? বিভিন্ন দিবসে মাঝে মাঝে তাকে মেসেজ দেই শুভেচ্ছা পাঠাই। তার সাথে কি আপনার একবারই দেখা হয়েছিল? কয়েকবার দেখা হয়েছে। সত্যি, তার বাসায় গিয়েছেন কখনো? না। কেন তার স্বামী মানে আপনার শিক্ষক কিছু মনে করবেন এই কারণে? তার তো বিয়েই হয়নি! বলেনকি! সত্যি তার বিয়ে হয়নি? তাহলে আপনি গল্পে এমনটি করলেন কেন? সে অনেক কথা। একজনার কথার প্রেক্ষিতে এমনটি করেছিলাম। তবে গল্পটা লেখার পর তাকে দিয়েছিলাম। তাকে এও বলেছিলাম- আমি গল্পের একটা সমাপ্তি টেনেছি তিনি যেভাবে চান সেভাবেই আমি শেষ করব। তাই নাকি? তা উনি কি বলেছিলেন? গল্পকার যেভাবে লিখেছেন সেভাবেই থাক। তবে আমার ধারণা। গল্পের সমাপ্তি তার পছন্দ হয়নি। আপনার চিঠিগুলো অসাধারণ। আমি বারবার পড়ি। আমার অনুমান দুইটি চিঠি একজনকে নিয়ে লিখা। হতে পারে। ঠিক মনে পড়ছেনা। বুঝতে পারি আমার লেখার মান যাই হোত একজন সমঝদার পাঠক পেয়েছি। আরো কিছু প্রশ্ন করি। আপনি মনে কিছু নেবননাতো? আমি আপনাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছিনা আপনার লেখার প্রেক্ষিতে লেখককে প্রশ্ন করছি। কোনো একজনকে লেখক (আপনি) ভালোবাসতেন। উনি নিজ থেকে দূরে চলে গেছেন। তাপরও লেখক তাকে কেন ভালোবাসেন এখনো? আমরা বাসায় চলে আসি। আমাকে ড্রয়িংরোমে রেখে ছুটে গিয়ে তার মাকে নিয়ে আসেন। দেখ মা কাকে নিয়ে এসেছি। আমাকে দেখেই তিনি চিনে ফেলেন। একসাথে চিটাগাং গিয়েছিলামনা আমরা? কেমন আছ তুমি? জ্বী ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? আমরাও ভালো আছি। মা তোমরা কথা বল। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি বলে পাশের রোমে যাবার পথে তাকে ডাক দিয়ে দাড় করান । মিতা শোন, একটু চায়ের পানি চুলোয় বসিয়ে দিসতো। তুমিতো কিছুটা শুকিয়ে গেছ। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করোনা নাকি? চট্টগ্রাম থেকে ফেরার পর পরিচিত সবাই বলাবলি করছিল আমি নাকি খানিকটা মোটা হয়ে গেছি। সেটা কন্ট্রোল করার জন্য খাদ্য তালিকা সামান্য পরিবর্ণ করেছি।। কি বলছ এসব! এ বয়সে এত কিছু হিসেব করে চললে হবে এ বয়সে সারাদিন বেশি বেশি করে খাবে কেমন? ও হ্যা তোমার পরিবারের লোকজন কেমন আছে? বাড়িতে গিয়েছিলে কি এর মাঝে? জ্বী বাড়ির সবাই ভালো আছে। অফিসের ব্যস্ততা এবং অন্যান্য কাজে বাড়ি যেতে পারছিনা । তবে যোগাযোগ আছে। আচ্ছা এখান থেকে গিয়ে কি তুমি অফিস করতে পারবে? মানে তোমার অফিস কি অনেক দূর? খানিক দূর বটে। তবে অনেকে এ শহর থেকে গিয়ে প্রতিদিন অফিস করে। তাহলে … এরি মাঝে মিতা রোমে প্রবেশ করে। সে মায়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জানতে চায় তাহলে কি মা? বলছিলাম আমাদের নিচ তলার এক পাশ তো খালি পড়ে আছে। ওর যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমাদের বাসা থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করতে পারে। আর খাওয়া দাওয়াটা ও আমাদের সাথে করতে পারে। দেখনা কেমন শুকিয়ে গেছে। কি সব যে রান্না করে বুয়ারা। খানিকটা রকিতার ছলে মিতা বলে তাহলেতো ভালই হয়, তাকে আর খুঁজে খুঁজে বের করে আনতে হবেনা। মিতা আমাদের পাশে এসে বসে। তার মা চা আনতে অন্য রোমে চলে যান। মা তো আপনাকে আমাদের বাসায় থাকতে বলছেন ,আপনার আগ্রহ আছে নাকি? না। দূর হয়ে যায়। আর মাঝে মাঝে তখন তখন অফিসে যাওয়া লাগে। আসতে চাননি এবার দেখলেন তো আপনাকে মা কতটা ভালোবাসেন। দিন শেষে বাসায় ফিরলে প্রায়ই জানতে চান আপনার সাথে দেখা হয়েছে কিনা। দেখলেননা আপনি শুকিযে গেছেন সেটাও উনার নজর এড়ায়নি। আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দেননি? কোনটির? লেখক কেন এখনো তার প্রিয় মানুষকে ভালোবাসে? ওই লেখাগুলো অনেক আগের। এখন আর তাকে ভালোবাসে বলে আমার মনে হয়না। তাই নাকি? ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যাওয়া যায়া যায়? আপনার জীবন থেকে এর উত্তর দেন আগে আমি পরে আমারটা বলছি। তার মা চা, বিস্কিট, সহ নানা ধরণের ফল ট্রেতে করে নিয়ে আসেন। চা পান করতে করতে বলেন-আমি ভেবে দেখলাম তোমাদের দুজনের মাঝে বেশ মিল আছে।তোমরা দুজনেই বয়সে বেশ পরপক্ক। তাই সরাসরিই বলি।তোমরা যদি মতামত দাও আমি তোমাদেরকে একত্রে করে দিতে চাই। এমন কথা শোনার জন্য আমার কেউই প্রস্তুত ছিলামনা। একে অপরের মুখের দিকে একবার তাকাই আবার তার মায়ের মুখের দিকে। আমাকে বাসায় ধরে এনে এমন কান্ড ঘটাবে মিতা ভাবেনি। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। আমার দিকে আর তাকাতে পারেনা। চোখ নামিয়ে নেয়। আমি বিষয়টিকে সহজ করার জন্য বলি বলছিলাম কি আমার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে নিন আপনি। তারা যদি মতামত দেন… আমিতো এক পক্ষের অভিভাবক, অন্য পক্ষকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। তোমার মতামত বল খানিব সময় নিয়ে বলি- একটু ভেবে বলি। আমার কখা শেষ না হতেই মিতাও বলে উঠে- আমি ভেবে বলি!